১। র্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র্যাব) প্রতিষ্ঠালগ্ন থেকে বিভিন্ন ধরণের অপরাধীদের গ্রেফতারের ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে আসছে। র্যাবের সৃষ্টিকাল থেকে হত্যাকারী, চাঁদাবাজ, অস্ত্রধারী সন্ত্রাসী, বিপুল পরিমান অবৈধ অস্ত্র গোলাবারুদ ও মাদক দ্রব্য উদ্ধার, ছিনতাইকারী, অপহরণ ও প্রতারকদের গ্রেফতার করে সাধারণ জনগণের মনে আস্থা অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। এছাড়াও বিভিন্ন সময়ে সংগঠিত চাঞ্চল্যকর এবং আলোচিত অপরাধীদের গ্রেফতার করে আইনের আওতায় এনে র্যাব জনগনের সুনাম অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। ২। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ রাজধানীর অভিজাত এলাকা গুলশান-২ এর একটি চায়ের দোকানের ভেতরে ধারালো অস্ত্র দিয়ে নৃশংসভাবে কুপানো ও গলা কাটা অবস্থায় দুই জন ব্যক্তির লাশ উদ্ধার করে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী। উক্ত হত্যাকান্ডের ঘটনায় ভিকটিম রফিকুল ইসলামের ছেলে বাদী হয়ে গুলশান থানায় ০১টি হত্যা মামলা দায়ের করে। যার মামলা নং-২১, তারিখ ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪। নৃশংস এই হত্যাকান্ডের ঘটনাটি এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি করে এবং বিভিন্ন প্রিন্ট ও ইলেক্ট্রনিক্স মিডিয়ায় গুরুত্বের সাথে প্রচারিত হলে ব্যাপক আলোচিত হয়। উক্ত হত্যাকান্ডের রহস্য উদ্ঘাটন ও জড়িতদের আইনের আওতায় নিয়ে আসতে র্যাব গোয়েন্দা নজদারী বৃদ্ধি করে। ৩। এরই ধারাবাহিকতায় গত রাতে র্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা, র্যাব-১ ও র্যাব-৭ এর যৌথ আভিযানিক দল চট্টগ্রাম মহানগরীর হালিশহর এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে উক্ত হত্যাকান্ডের মূল আসামি ১। রুমন (২৭), পিতা- আফজাল হোসেন, কটিয়াদী, কিশোরগঞ্জকে গ্রেফতার করা হয়। প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃত উক্ত হত্যাকান্ডের বিষয়ে গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রদান করে। ৪। স্থানীয় সূত্রে জানা যায় যে, ভিকটিম মোঃ রফিকুল ইসলাম সিকদার (৬২) এর নিজ জেলা বরিশাল। তিনি রাজধানীর গুলশান-২ এর রোড নং ১০৮, প্লট নং ২১ এর কেয়ারটেকার হিসেবে চাকুরী করার পাশাপাশি প্লটের ভিতরে ছোট একটি দোকানে চা-বিস্কুট বিক্রি করতেন। এছাড়াও অপর ভিকটিম সাব্বির (১৫) ভিকটিম রফিকের চায়ের দোকানের কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো। তার গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর এলাকায়। তারা দুইজনে প্লটের পিছনের অংশে একটি রুমে রাত্রী যাপন করতো বলে জানা যায়। ভিকটিম রফিক এর ছেলে জানায় গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ রাত আনুমানিক ০৮.৩০ ঘটিকায় তার বাবা ভিকটিম রফিক দোকান বন্ধ করে এবং তার সাথে মোবাইল ফোনে কথা হয়। পরবর্তীতে ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ সকাল থেকে ভিকটিম রফিক এর মোবাইল বন্ধ থাকায় তার পরিবারের সদস্যরা যোগাযোগ করতে পারে না। গত ২৮ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ সকাল ০৮৩০ ঘটিকায় ভিকটিমদ্বয়ের পরিবারের সদস্যরা এসে তাদের থাকার রুমের দরজার তালা ভেঙ্গে ভিতরে প্রবেশ করলে বিছানার চাদর দিয়ে ঢাকা রক্তাক্ত নিথর ০২টি দেহ দেখতে পায়। ৫। গ্রেফতারকৃতকে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায় যে, ভিকটিম রফিক এর চায়ের দোকানে ০১ মাস যাবৎ ভিকটিম সাব্বির চাকুরী করছিল। ভিকটিম সাব্বির চাকুরী ছেড়ে দেয়ার বিষয়টি জানালে ভিকটিম রফিক দোকানের জন্য নতুন কর্মচারী খোঁজ করতে থাকে। পরবর্তীতে ০৭ দিন পূর্বে তার পূর্বপরিচিত একজনের মাধ্যমে গ্রেফতারকৃত রুমন ভিকটিম রফিক এর দোকানে কর্মচারী হিসেবে থাকা-খাওয়াসহ প্রতি মাসে ৫ হাজার টাকা বেতনে কাজ শুরু করে। বেতন অল্প হওয়ায় ও দোকানের কাজকর্ম নিয়ে ভিকটিম রফিকের সাথে গ্রেফতারকৃত রুমনের বেশ কয়েকবার বাকবিতন্ডা হয়। এ প্রেক্ষিতে গ্রেফতারকৃত রুমনের মধ্যে ভিকটিম রফিকের প্রতি ক্ষোভের সৃষ্টি হয়। গ্রেফতারকৃত রুমন ভিকটিম রফিককে উচিত শিক্ষা দিয়ে দোকানের মূল্যবান মালামাল ও অর্থ হাতিয়ে নেয়ার পরিকল্পনা করে। উক্ত হত্যাকান্ডে সাথে আরও ০২ জন জড়িত থাকার বিষয়ে গ্রেফতারকৃত রুমন তথ্য প্রদান করে, যে বিষয়ে তদন্ত চলমান রয়েছে। গত ২৬ সেপ্টেম্বর ২০২৪ তারিখ ভিকটিম রফিক, সাব্বির এবং গ্রেফতারকৃত রুমন দোকানের কার্যক্রম শেষে রাতের খাবার খেয়ে শুয়ে পড়ে। পূর্বপরিকল্পনা অনুযায়ী রাত আনুমানিক ০২০০ ঘটিকার সময় ধারালো অস্ত্র দিয়ে প্রথমে ভিকটিম রফিক এর মাথায়, গলায় ও শরীরের আঘাত করা হয়। ভিকটিম সাব্বির দেখে ফেললে তাকেও মাথায় এবং শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করে গুরুত্বর জখম করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করে বিছানার চাদর দিয়ে ঢেকে রাখা হয়। এরপর গ্রেফতারকৃত রুমন বাসা তল্লাশী করে নগদ টাকা লুট করে এবং কফি মেশিনসহ দোকানের মূল্যবান মালামালসমূহ বেশ কয়েকটি বস্তার মধ্যে ঢুকিয়ে রাখে। পরবর্তীতে সকাল আনুমানিক ০৭০০ ঘটিকায় একটি ভাড়াকৃত পিকআপযোগে দোকানের মালামাল নিয়ে গ্রেফতারকৃত রুমন ঘটনাস্থল ত্যাগ করে এয়ারপোর্ট এলাকায় এসে বাসযোগে মালামালসহ তার নিজ বাড়ীতে চলে যায়। লুণ্ঠিত মালামালগুলো তার আত্মীয়-স্বজনের বাড়িতে লুকিয়ে রেখেছে বলে জানা যায়। ৬। গ্রেফতারকৃত রুমন পূর্বে নিজ এলাকায় কৃষি কাজের পাশাপাশি ইট ভাটায় শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। ১/২ বছর পূর্বে রাজধানীর উত্তরায় একটি দোকানে কর্মচারী হিসেবে কাজ করতো বলে জানায়। গ্রেফতারকৃত আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর গ্রেফতার এড়াতে কিশোরগঞ্জে তার বোনের বাড়ীতে আত্মগোপন করে। সেখানে অবস্থানের পর গ্রেফতারকৃত রুমন চট্টগ্রামে তার নিকট আত্মীয়ের বাসায় আত্মগোপনে চলে যায়। আত্মগোপনে থাকাকালীন র্যাব কর্তৃক গ্রেফতার হয়। ৭। গ্রেফতারকৃতের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন।